ব্রেকিং নিউজ :
বিজয়া দশমীতে ছাত্রদল নেতার ভিন্নধর্মী কর্মসূচি সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন ভোলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ১১২টি পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন বরিশালে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা কাপ্তাই হ্রদে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শেষ হল দুর্গোৎসব বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রাত ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা : ধর্ম উপদেষ্টা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার এনসিপির নেতাকর্মীদের, সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখার প্রতিশ্রুতি জি৭ মন্ত্রীদের
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১০-১১
  • ৩৪৫৫৪৯৯ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা ও বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তৃণমূল সংগঠন নিহন হিদানকিও।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ওয়েবসাইটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি জাপানি সংস্থা নিহন হিদানকিওকে ২০২৪ সালের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নওরোজিয়ান নোবেল কমিটি আজ ১১ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে এ পুরস্কারের জন্য সংস্থার নাম ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি বলেছে, হিবাকুশা নামেও পরিচিত জাপানি সংস্থা হিদানকিওকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পারমাণবিক অস্ত্র যে আর কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো।
ঘোষণা আকারে দেয়া নোবেল কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৪৫ সালের আগস্টের পারমাণবিক বোমা হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার সদস্যরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপর্যয়মূলক মানবিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ‘রীতি’ গড়ে ওঠে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে কঠোরভাবে নিন্দা করে। এই রীতিটি ‘পরমাণু ট্যাবু’ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে হিরোশিমা ও নাগাসাকির পরমাণু বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়াদের সাক্ষ্য অনন্য।
এই ঐতিহাসিক সাক্ষীরা ব্যক্তিগত গল্পের নিরিখে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষামূলক প্রচারণা তৈরি করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি সতর্কবার্তা জারি করে সারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা সৃষ্টি ও একত্রিত করতে সাহায্য করেছে। হিবাকুশা আমাদেরকে অবর্ণনীয়কে বর্ণনা করতে, অচিন্তনীয়কে চিন্তা করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে সৃষ্ট অবোধ্য যন্ত্রণা ও দুর্ভোগকে এক রকম উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
পারমাণবিক ট্যাবু প্রতিষ্ঠায় হিদানতিওর ব্যাপক অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি তবু একটি উৎসাহজনক সত্য স্বীকার করতে চায়: প্রায় ৮০ বছরে যুদ্ধে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নিহন হিদানকিও ও হিবাকুশার অন্যান্য প্রতিনিধিদের অসাধারণ প্রচেষ্টা পারমাণবিক ট্যাবু প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রেখেছে। তাই এটি উদ্বেগজনক যে আজ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে এই ট্যাবু চাপে রয়েছে।
পরমাণু অস্ত্রকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র উল্লেখ করে নোবেল কমিটি বলেছে, পারমাণবিক শক্তিগুলো তাদের অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ ও নবায়ন করেছে; নতুন দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে; এবং চলমান যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মানব ইতিহাসের এই মুহূর্তটি পরমাণু অস্ত্র কী তা নিজেদের মনে করিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত সময়।
আগামী বছর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি আমেরিকান পারমাণবিক বোমা হামলায় আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার বাসিন্দাকে হত্যার ৮০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে নোবেল কমিটি স্মরণ করে যে, পরমাণু হামলার পরবর্তী সময়ে আরো বিপুল সংখ্যক মানুষ পুড়ে ও বিকিরণের ক্রিয়ায় মারা যায়। অনুমান করা হয় যে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রমণ থেকে বেঁচে গেছে। এই জীবিতদের জাপানি ভাষায় হিবাকুশা বলা হয়।
আজকের পারমাণবিক অস্ত্রের অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক শক্তি রয়েছে উল্লেখ করে এগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে নোবেল কমিটি বলেছে, এগুলো লাখ লাখ মানুষ হত্যা করতে পারে এবং জলবায়ুকে বিপর্যয়করভাবে প্রভাবিত করবে। একটি পারমাণবিক যুদ্ধ আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিল তাদের ভাগ্য দীর্ঘকাল অন্তরালে ও অবহেলিত ছিল। ১৯৫৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার শিকারদের সাথে স্থানীয় হিবাকুশা অ্যাসোসিয়েশনগুলো ‘জাপান কনফেডারেশন অব এ- ও এইচ-বম সাফারারস অর্গ্যানাইজেশনস গঠন করে। এই নামটি জাপানি ভাষায় সংক্ষিপ্ত করে নিহন হিনদাকিও করা হয়। পরে এটি জাপানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী হিবাকুশা সংস্থায় পরিণত হয়।
নিহন হিদানকিওকে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সময় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি সেই সমস্ত জীবিত ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে চায় যারা শারীরিক কষ্ট ও বেদনাদায়ক স্মৃতি নিয়েও শান্তির আশা জাগাতে ও তৎপরতা গড়ে তুলতে তাদের অমূল্য অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে উদ্যোগী হয়েছেন।
নোবেল কমিটি বলেছে, নিহন হিদানকিও হাজার হাজার সাক্ষীর বিবরণ প্রদান করেছে, রেজুলেশন জারি করেছে এবং জনসাধারণের কাছে আবেদন করেছে, জাতিসংঘে বার্ষিক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে এবং বিভিন্ন শান্তি সম্মেলনে বিশ্বকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
একদিন হিবাকুশা আর আমাদের মাঝে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে না। তবে স্মরণের একটি  জোরদার ও ক্রমাগত অঙ্গীকারের মধ্য জাপানের নতুন প্রজন্ম সাক্ষীদের অভিজ্ঞতা ও বার্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে এবং শিক্ষিত করে তুলছে। এভাবে তারা পারমাণু ট্যাবু বজায় রাখতে সাহায্য করছে, যা মানবতার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পূর্বশর্ত।
নিহন হিদানকিওকে ২০২৪ সালের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আলফ্রেড নোবেলের উইলে সুরক্ষিতভাবে  প্রোথিত রয়েছে- উল্লেখ করে নোবেল কমিটি বলেছে, এ বছরের পুরষ্কার শান্তি কমিটি আগে পারমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পুরোধাদের যত পুরস্কার দিয়েছে তাদের একটি বিশেষ তালিকায় যুক্ত হবে।
নোবেল কমিটি দৃঢ়তার সঙ্গে ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপকারের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে ‘আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা পূরণ’ বলে অভিহিত করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat