দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সূচকগুলো পর্যালোচনা করা হয়। আলোচনায় মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, চলতি হিসাব, প্রবাস আয়, আমদানি ও শিল্পখাতে ঋণপত্র খোলার অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় পর ২০২৫ সালের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে। সর্বশেষ তথ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা জুন ২০২৫-এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে। সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ সাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
মজুরি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির হারের ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে আগের বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যে প্রকৃত আয় কমে গিয়েছিল, চলতি অর্থবছরে সেখান থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কৃষি খাত নিয়ে আলোচনায় জানানো হয়, যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে গত অর্থবছরে বোরো ধানে ভালো ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের ফলনও সন্তোষজনক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। বাকি ফসল কর্তন শেষ হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি, আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
আর্থিক ও বৈদেশিক খাতের অগ্রগতি তুলে ধরে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া, প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং সুদের হার বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভ আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি হিসাব প্রসঙ্গে জানানো হয়, টানা কয়েক বছর ঘাটতির পর এ খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে চলতি হিসাব ঘাটতি নেমে এসেছে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন ডলারে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ঘাটতি ছিল ৭৪৯ মিলিয়ন ডলার।
প্রবাস আয় নিয়েও ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৫ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। একই সময়ে প্রবাস আয় এসেছে ১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
আমদানি খাত নিয়ে আলোচনায় জানানো হয়, উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে আমদানির ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ঋণাত্মক।
শিল্পখাতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে আস্থা ফিরে আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করার ফলে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে।