ব্রেকিং নিউজ :
জনগণের ওপর আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি: আবদুস সালাম নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে জামায়াত-এনসিপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা সিলেটে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত চট্টগ্রামে দখলমুক্ত হচ্ছে শেখ বশির সড়ক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এস এম আমজাদ হোসেনের স্মরণসভা পিরোজপুরে অসচ্ছল মেধাবীদের উচ্চশিক্ষা বৃত্তি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন ৩৫৫ কোটি টাকা, সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ভূমি সেবা সত্যিকারার্থে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে: ভূমি সচিব পুঁজিবাজারে অনিয়ম : সাবেক চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান জাবি ভিসির
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৭-০৪
  • ৩৩০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের তাত্পর্য
আজ ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ২৪৩ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দিয়েছিল আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দুইদিন পর ৪ জুলাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন আসে কংগ্রেসের হাত ধরেই। অবশ্য ব্রিটেনের সঙ্গে পৃথক হওয়ার জন্য চূড়ান্ত স্বাক্ষর ২ আগস্টে অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যেক বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। আসলে ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাইয়ের আগে ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিল। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি এবং স্বাধীন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট (১৭৮৯-১৭৯৭)। স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকানকে জীবন দিতে হয়। একইসঙ্গে ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনার মৃত্যু ঘটে যুদ্ধে। কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করেন। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং পরিশেষে সেটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এই বাণীকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার বাণী রচিত হয়েছে।
 
১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয়, সেদিন উত্পাটিত হয়েছিল সব পরাধীনতার শৃঙ্খল, বহাল হয়েছিল বাকস্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি কোনো আইন পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা পেয়েছিল সবাই, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ। অর্থাত্ নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন তথা গোটা মিডিয়ার স্বাধীনতা তাও স্বীকৃতি পায়। সেদিন ব্যক্তি জেনেছিল ধর্ম পালনে রাষ্ট্র কাউকে বাধ্য বা নিষেধও করবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে।
 
আমেরিকার ইতিহাসে ১৭৭৬ সালের জুলাই মাসের শুরু হয়েছিল আশা জাগানিয়া অনেক বার্তা নিয়ে। সেই সালের ২ তারিখ ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক। কারণ ওই দিন ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য রাজনীতিবিদরা তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতার স্তম্ভ। জেফারসনের হূদয় তখন আন্দোলিত স্বাধীনতা ও মুক্তির নিশানায়। কংগ্রেসের কোজিং সেশনে উপস্থাপিত প্রতিপাদ্য ৪ জুলাই চূড়ান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র মহিমা ত্বরান্বিত হয়ে ওঠে; স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। অদ্ভুত হলেও সত্য জন অ্যাডামস এবং টমাস জেফারসন উভয়ই ছিলেন যুুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রেসিডেন্ট আর তাদের মৃত্যু হয় একই তারিখ অর্থাত্ ৪ জুলাই। সেদিন ১৮২৬ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণার পঞ্চাশ বছর। ডিকারেশনে স্বাক্ষর না থাকলেও জেমস মনেরা ছিলেন আরেক স্বাধীনতার জনক, যিনি পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন ১৮৩১ সালে। ত্রিশতম প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ জন্মগ্রহণ করেন ৪ জুলাই ১৮৭২ সালে।
 
১৭৭৭ সালে প্রথম যেদিন দিবসটি উদযাপনের সূচনা হলো সেদিনকার সকালটা ছিল বর্ণিল। তেরবার তোপধ্বনি আর অভিবাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া সেই দিনটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসে। ১৭৭৮ সালে জর্জ ওয়াশিংটন, জন অ্যাডামস আর বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন একত্রিত হন। ভোজের আয়োজন করা হয় প্যারিসেও। কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্স ও স্পেন ছিল আমেরিকার মিত্র। দিবসটিতে আমেরিকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বহু শিশু আনন্দ-নৃত্যে মেতে ওঠে। কার্টুন আর বাদ্যের তালে মুখরিত করে তোলে এক একটি রাজ্য।
 
২৪৩ বছরে উপনীত হয়ে স্বাধীনতা দিবসটি উদযাপনে বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য এসেছে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব জোয়ারে, তবু পুরানো অনেক কিছু এখনো প্রচলিত আছে। সপ্তাহজুড়ে প্যারেডগুলো সম্পন্ন হয় সকালে, সন্ধ্যায় হয় আতশবাজি আর পারিবারিক পুনর্মিলনী; রাত্রি জেগে ওঠে সংগীতের মূর্ছনায়। কোনো কোনো শহরের সুউচ্চ টাওয়ার থেকে আলোককিরণ ছড়িয়ে পড়ে গ্রীষ্মের বাতাসে। দিবসটিতে আপনি শুনতে পাবেন দেশাত্মবোধক গান আর জাতীয় সংগীত, ‘গড ব্লেস আমেরিকা’, ‘আমেরিকা বিউটিফুল’, ‘দিস ল্যান্ড ইজ ইয়োর ল্যান্ড’ প্রভৃতি স্লোগান। কখনো বা প্রত্যন্ত অঙ্গরাজ্যের লোকায়ত সুরে যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে আপনাকে।
 
আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস গুরুত্বপূর্ণ কেন? গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করছেন এবং তাদের বন্ধন ও শেকড় এখন অনেক গভীরে। বাঙালি ফজলুর রহমান খান যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অবস্থিত উচ্চতম টাওয়ারের নকশা করেছেন। সাল খান একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। হ্যানসেন কার্ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন কংগ্রেসম্যান। এম. ওসমান সিদ্দিক ফিজিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অর্থাত্ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকান জনগণের এবং বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগণের কল্যাণ বয়ে এনেছে এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রসার ঘটিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের যৌথ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া, মার্কিন একাধিক বড় কোম্পানি বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছেও বিশেষ তাত্পর্য বহন করে।
 
n লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat