ব্রেকিং নিউজ :
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন ডিসেম্বরের শুরুর দিকে রিপোর্ট চূড়ান্ত করবেন : ফলকার টুর্ক সায়েমা ওয়াজেদ ‘নিষ্ক্রিয়’ হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সরাসরি কাজ করবে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ঢাকায় এসেছে থাইল্যান্ডের চিকিৎসকদল সাতক্ষীরায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিনা লাভের দোকান চাঁদপুরের বীজ, সার ও নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ শহিদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহতদের পাশে থাকবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট : নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন : মির্জা ফখরুল দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হবে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংস্কার হতে হবে টেকসই, যেন আপত্তিকর চর্চার পুনরাবৃত্তি না হয় : ফলকার
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১০-১৯
  • ৩২৪৩৪৬১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা চেম্বারের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, এসএমই খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।

আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এর সংস্কার: প্রেক্ষিত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করছেন ঠিকই, তবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনে এখাতের ভূমিকা এখনও আশানুরূপ নয়, এক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষতার অভাব, রাজস্ব নীতিমালা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে দেশের তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ করে সেবা খাতের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের সার্বিক উন্নয়নে এ খাতের উদ্যোক্তাদের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ এবং এরসাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের অন্যান্য নীতিমালাসমূহের অনুসরণ করা দরকার। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়িক কাজে সম্পৃক্ত সকল ধরনের লাইসেন্স প্রদান ও নাবায়ন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনা, রাজস্ব কাঠামোর সংস্কার, শুল্ক ব্যবস্থাপনার সহজীকরণ, লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, এসএমইদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে দক্ষতা বাড়ানো ও পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) মো. সলিম উল্লাহ, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনর (বিসিক) পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) কাজী মাহবুবুর রশিদ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই এন্ড স্পেশাল পোগ্রাম্স ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মোস্তফা, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন, এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম হাসান সাত্তার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কায়েস হামিদ, ঢাকা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান পলাশ এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এভিপি খন্দকার মোস্তাক হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উল্লাহ জানান, আন্তর্জাতিক মানের একটি এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এখাতের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এসএমই’র উন্নয়নে নীতিমালা থাকলেও সেটি বাস্তবায়নে ইপিবি’র মত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য, কারণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন করলেও মূলত অধিদপ্তরসমূহ পাঠ পর্যায়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ইপিবি কাজ করছে এবং এক্ষেত্রে এসএমই উদ্যোক্তাদের আরো বেশি হারে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি জানান, ইপিবি’র পক্ষ হতে ‘কান্ট্রি অব অরিজিন (সিও)’ সার্টিফিকেশন অনলাইনে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি সহ অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য আমাদের সামগ্রিক রাজস্ব কাঠমো বেশ জটিল বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন এবং ইপিবি’র পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়া সহজীকরণে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

বিসিকের পরিচালক কাজী মাহবুবুর রশিদ বলেন, দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এসএমইদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিসিককে আরো শক্তিশালী করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন জানান, ‘মাইক্রোক্রেডিট ফাইন্যান্সিং ইন্সটিটিউট’ গুলোর মাধ্যমে দেশের মোট এসএমই’র ৭০ শতাংশই ঋণ পেয়ে থাকে, যার ৯০ভাগই নারী উদ্যোক্তা। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ার সহজীকরণের পাশাপাশি দুর্নীতি হ্রাসে তিনি অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাসমূহের কার্যপরিধি সুনিদিষ্ট করা আবশ্যক। সেই সাথে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশের লক্ষ্যে একটি ‘কমন প্ল্যাটফর্ম সেন্টার’ স্থাপনেরও তিনি প্রস্তাব করেন, পাশাপাশি দেশে পরিচালিত ‘টেকন্যিাল’ এবং ‘ভোকেশনাল’ শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন করা একান্ত আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন।

বিআইবিএম’র সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন এখাতের উদ্যোক্তাদের সার্বিক উন্নয়নে ‘এসএমই ইনোভেশন ল্যাব’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে নতুন পণ্য উদ্ভাবন,দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ সহজতর হবে। এছাড়াও তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘সীড ফান্ড’, ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ এবং ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল’ কার্যক্রম প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন।

নাসিব’র সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন বলেন, শুধুমাত্র নীতিমালা প্রণয়ন করলেই হবে না, এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে। সেই সাথে তিনি আসন্ন এসএমই নীতিমালায় ‘আরবিট্রেশন’ ব্যবস্থা অন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, আমাদের এসএমই নীতিমালা থাকলেও সেটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা আশানুরূপ ভাবে পাওয়া যায়নি, ফলে পাঠ পর্যায়ে কার্যকর ফল পাওয়া যায়নি। সেই সাথে এ নীতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। এখাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকল্পে সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কারের উপর তিনি জোর দেন। এছাড়াও তিনি রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের সম্ভাবনাময় কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা-প্রকৌশল, পাট এবং চমড়া শিল্পে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কায়েস হামিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম’-এর কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে এখাতের উদ্যোক্তাদের আর্থায়ন আরো সহজতর হবে। পাশাপাশি ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা সম্প্রসারণেরও তিনি প্রস্তাব করেন।

ঢাকা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান পলাশ বলেন, এসএমইদের অর্থায়নে প্রয়োজনীয় ফান্ড থাকলেও সংজ্ঞায় (বৈশিষ্ট্য)  এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্রের অভাবে ঋণ প্রদান করা যাচ্ছে না। দেশের রপ্তানিতে এসএমইদের অবদান বাড়াতে এখাতের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্স’র এভিপি খন্দকার মোস্তাক হোসেন বলেন, ঋণ প্রদানে সম্পৃক্ত সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এসএমই উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্তকরণ বাড়ানো প্রয়োজন, সেই সাথে এখাতে খেলাপী ঋণ হ্রাস করা গেলে অন্যান্য এসএমইদের জন্য ঋণ সহায়তা আরো সহজতর হবে।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী অংশগ্রহণ করেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat