বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজহারভূক্ত আসামী দুই শিক্ষক এবং সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন- কেন্দ্রীয় ভান্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মাহবুবা আক্তার, প্রক্টর অফিসের রাফিউল হাসান রাসেল, নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম জনি, কর্মচারী আমির হোসেন, আশিকুন্নাহার টুকটুকি এবং নুরনবী।
এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ, ছাত্র সংসদ চালু এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৮তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ ও বেগম রোকেয়াা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমান।
বিকেলে সিন্ডিকেট সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো শওকত আলী সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক, একাডেমিক শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আবাসিক হলের সিট বাণিজ্য এবং হলে দখলদারিত্ব বন্ধ থাকবে। সে মোতাবেক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না। এক্ষেত্রে যদি কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয়ের আইনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত যে সকল শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব শেষ করে চলে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘কেউ যেনো হয়রানীর শিকার না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। আশা করি, আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবো।’
উপাচার্য বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে অচিরেই ছাত্র সংসদ চালু করা হবে। তিনটি আবাসিক হলেও থাকবে ছাত্র সংসদ। এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছুটি ব্যতীত যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্মস্থলে অনুপস্থিত তাদের ছুটি মঞ্জুর না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার জন্য তাদের সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, তিনজন শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিবহনপুলের বাস বিক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বিশ্ববদ্যিালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভীষণ খুশি হয়ে তারা ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
এরআগে, ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে এবং শাস্তির ধরন নির্ধারণে গত ২২ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উক্ত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ সোমবারের সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা শেষে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ।
তার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে এক অদম্য গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করে যা পরবর্তীতে ৫ আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।