মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঙ্গলবার ইসরাইল সফর করেন। সেখানে তিনি গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নেতৃত্বে পরিচালিত চুক্তির জন্য হামাসের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছেন।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার তেল আবিবে আগে থেকেই ছিলেন।
সেখানে তারা গাজায় দুই বছর বন্দী থাকার পর হামাস কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরাইলি জিম্মিদের সাথে দেখা করেছেন।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে, ‘ইসরাইলে আপনাকে স্বাগতম, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স’।
‘প্রতিশ্রুত ভূমি এবং মুক্ত ভূমি একসাথে অবশিষ্ট ১৫ জন জিম্মির মুক্তিসহ একটি উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে।’
সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ভ্যান্স মঙ্গলবার উইটকফ এবং কুশনারের সাথে দেখা করেছেন এবং যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞদের সাথেও তার দেখা করার কথা।
ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বুধবার জেরুজালেমে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি নেতাদের সাথে দেখা করবেন।
রোববার হামাস দুই সেনাকে হত্যা করেছে এবং জিম্মিদের মৃতদেহ হস্তান্তর বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর, তারা ওই অঞ্চলে একের পর এক হামলা চালায়। পরে বলে যে, তারা যুদ্ধবিরতি ‘নতুনভাবে প্রয়োগ’ করেছে।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নাজুক গাজা চুক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করছে।
ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলো হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গাজায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত।
যদি তারা তার শান্তি পরিকল্পনার কথিত চুক্তি লঙ্ঘন বন্ধ না করে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের এখনকার মহান মিত্রদের অনেকেই এবং মধ্যপ্রাচ্যের আশেপাশের অঞ্চলগুলো আমাকে জানিয়েছে, তারা আমার অনুরোধে বাহিনী নিয়ে গাজায় প্রবেশ এবং হামাস যদি খারাপ আচরণ অব্যাহত রাখে তবে ‘হামাসকে সোজা করার’ সুযোগকে কাজে লাগাবে’।
- ‘খুব, খুবই নাজুক’ -
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, চুক্তিটি এখনও বহাল আছে এবং হামাস বুঝতে পারে এটি লঙ্ঘন করলে পরিণতি কী হতে পারে।
সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘তাদের নির্মূল করা হবে এবং তারা তা জানে’।
দক্ষিণ গাজা শহর রাফায় রোববারের মারাত্মক সহিংসতার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে হামাস অস্বীকার করেছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভয়াবহ বোমা হামলায় ৪৫ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এর ইসরাইল বিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেছেন, ‘গাজাকে আরও ধ্বংস করা থেকে ইসরাইলকে থামাতে একমাত্র ব্যক্তি হলেন ট্রাম্প’।
তিনি এএফপি’কে বলেছেন, নেতানিয়াহু ‘ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য কিছু কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি অন্য কিছু করছেন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি খুবই নাজুক।
তিনি বলেছেন, ‘যতদূর ইসরাইলিরা উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে খুশি তাদের জিম্মিরা বেরিয়ে এসেছে। তারা স্থিতিশীলতা আনতে চায় কিন্তু তারা ভীত যে হামাস এখনও টিকে আছে’।
- চ্যালেঞ্জ, সুযোগ -
উভয় পক্ষই বলেছে, তারা সপ্তাহান্তের সহিংসতা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার কবর থেকে উত্তোলিত আরও দুই জিম্মির মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া ১৮০০ জিএমটি’তে অনুষ্ঠিত হবে।
হামাস এখনও পর্যন্ত চুক্তির অধীনে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ২৮টি জিম্মির মৃতদেহের মধ্যে ১৩টি হস্তান্তর করেছে। তবে হামাস সতর্ক করে দিয়েছে, ভূখণ্ডে ধ্বংসের মাত্রার কারণে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ইসরাইল ‘এ বিষয়ে আপস করবে না এবং যতক্ষণ না আমরা সমস্ত মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে না দিই ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও প্রচেষ্টা ছাড়বে না’।
রেড ক্রস জানিয়েছে, চুক্তির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ১৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ইসরাইল থেকে গাজায় পাঠানো হয়েছে। যার ফলে মোট মৃতদেহ ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপও প্রস্তাব করেছিল কিন্তু এর বাস্তবায়ন দ্রুত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
সোমবার, নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি এবং ভ্যান্স ‘আমাদের মুখোমুখি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের সামনে কূটনৈতিক সুযোগ’ নিয়ে আলোচনা করবেন। কারণ, তিনি তার সরকারের কট্টরপন্থীদের কাছ থেকে চুক্তি ত্যাগ করে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন।
- ইসরাইলে মিশরের গুপ্তচর প্রধান -
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এবং মিশরের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অনুসারে যুদ্ধবিরতি জোরদার করতে মঙ্গলবার মিশরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদও ইসরাইলে ছিলেন।
মার্কিন মিত্র এবং সহযোগী যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতার ইসরাইলকে ১১ দিনের যুদ্ধবিরতির ‘ক্রমাগত লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি আইন প্রণেতাদের বলেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনে সমস্ত ইসরাইলিদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন এবং অনুশীলনের নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করছি’।
মিশর ও কাতারের সাথে আলোচনার জন্য কায়রোতে অবস্থানরত হামাসের নেতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন।
হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমরা যা শুনেছি তা আমাদের আশ্বস্ত করে যে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি যুদ্ধ শেষ হয়েছে’।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামাসের অতর্কিত হামলার ফলে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে গাজায় কমপক্ষে ৬৮,২২৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মতে গাজায় ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ২০ হাজরেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে।