বয়স বাড়লেও প্রভাব কমেনি একটুও। গল্পটা লিওনেল মেসির। অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডার এস্তাদিও ১১ দে নভেমব্রে স্টেডিয়ামে শুক্রবারের সন্ধ্যাটা ফুটবলের জন্য নয়, যেন একজন মানুষকেই দেখার উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। বল যখনই মেসির পায়ে এসেছে, প্রতিপক্ষ অ্যাঙ্গোলার গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়েছে। কেউ হাততালি দিয়েছে, কেউ ফোনের আলো জ্বেলে ধরেছে, কেউ আবার চুপ করে মাথা নুইয়ে সম্মান জানিয়েছে। যেন পুরো স্টেডিয়াম বলছে, এই মেসি সবার।
অ্যাঙ্গোলা তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন চেয়েছিল বিশেষ কিছু। সে কারণে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ডেকে আনা হয় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শক উপস্থিত থেকে দেখলেন ৩৮ বছর বয়সেও কীভাবে এখনো পুরো মাঠে প্রভাব ফেলেন মেসি। শুরু থেকেই ছন্দে ছিল মেসি-লাউতারো জুটি। আক্রমণের প্রতিটি মুহূর্তে তাদের বোঝাপড়া পরিষ্কার।
মেসির প্রতিটি পাসেই আনন্দে ভেসেছে গ্যালারি। অ্যাঙ্গোলা ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে গেলেও মেসিকে শেষ পর্যন্ত আটকানো যায়নি। ৪৩ মিনিটে তার নিখুঁত থ্রু বল ধরে লাউতারোর নিচু শট জালের পথ খুঁজে পেয়েছে। গোলের পর গ্যালারিতে যে আওয়াজ উঠেছে, তা শুধু আর্জেন্টিনার নয়, অ্যাঙ্গোলার দর্শকদেরও। প্রতিপক্ষের মাঠে এমন সম্মান পাওয়া শুধু মেসির মতো জনমান্য ফুটবলারের পক্ষেই সম্ভব।
দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাঙ্গোলা লড়াই না থামালেও একসময়ে অভিজ্ঞতা সবকিছু ছাপিয়ে যায়। ৮২তম মিনিটে লাউতারোর পাসে মেসি যখন বাম পায়ের শটে দ্বিতীয় গোলটি করলেন, তখন পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছে। আর্জেন্টিনা বছরের শেষ ম্যাচ ২-০তে জিতলেও, রাতটা শুধুই মেসির। স্কালোনির দল ২০২৫ সালে খেলেছে ৯ ম্যাচ, জিতেছে ৭টি। আর মেসি? শেষ আট ম্যাচে ১১ গোলের সঙ্গে ৯ অ্যাসিস্ট। জাতীয় দলের হয়ে তার গোল এখন ১১৫টি।
ম্যাচের পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসি লিখেছেন, 'আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা এবং আকাশি-সাদা রংকে রক্ষা করতে পারায় আমি গর্বিত।' লুয়ান্ডার গ্যালারিতে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দেখলেই বোঝা যায়, এ গর্বের যথেষ্ট কারণ আছে। ফুটবলে তারকা অনেক আসে যায়। কিন্তু যখন প্রতিপক্ষের মাঠেও হাজার হাজার মানুষ কারো প্রতিটি মুহূর্ত উদযাপন করে, তখন বোঝা যায়, ফুটবল ভালোবাসার একটি বিশ্বভাষা। আর সেই ভাষার শ্রেষ্ঠ দূত এখনো লিওনেল মেসি।